রবিবার, ১০ নভেম্বর, ২০১৩

আত্মহত্যা বনাম ধর্মীয় মূল্যবোধ

ইদানিং কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা খুব বেশি পরিমাণে বৃদ্ধি পাচ্ছেএকটি জাতীয় দৈনিকের জরীপ অনুযায়ী গত ৭ মাসে শুধু চট্টগ্রামেই শতাধিক আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছেআর এর অধিকাংশই কিশোর-কিশোরীকিন্তু কেন?
বিশেষজ্ঞদের মতে, পিতা-মাতার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত, প্রয়োজনীয় বিনোদনের অভাব, ভিনদেশি সংস্কৃতির অগ্রাসন, অস্থিরতা ও পারিবারিক শৃঙ্খলা বিনষ্ট হওয়ায় কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছেসমাজ বিজ্ঞানী ড. গাজী সালেহ উদ্দিন বলেন, পিতা-মাতার সান্নিধ্য লাভে ব্যর্থ হয়ে সৃষ্ট হতাশা ও একাকিত্বের কারণে কিশোর কিশোরীরা আত্মহত্যার দিকে ঝুঁকছেএছাড়া ব্যর্থতাবোধ বৃদ্ধি, বিনোদনের অভাব, বিদেশি সংস্কৃতির আগ্রাসন তো রয়েছেই

অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয় হলো, ধর্মীয় মূল্যবোধের কথা কেউ উল্লেখ করছে নাসব কারণগুলোর মূল হচ্ছে এই ধর্মীয় মূল্যবোধউপরোল্লিখিত কারণগুলো যখন মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে তখন ধর্মীয় মুল্যবোধের কাছে এসে তা নতজানু হয়ে ফিরে যাবেএই ধর্মই মানুষকে নৈতিকতা শিক্ষা দেয়যা থেকে মানুষ তার জীবন চলার পাথেয় পায়উপরোল্লিখিত কারণগুলোর প্রত্যেকটির মূলে রয়েছে এই ধর্মীয় শিক্ষাপিতা-মাতার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হওয়া কিংবা পারিবারিক শৃঙ্খলা বিনষ্ট থেকে শুরু করে ভিনদেশি সংস্কৃতির অগ্রাসন প্রত্যেক পিছনেই রয়েছে ধর্মের এক সুবিশাল প্রতিরক্ষা প্রাচীরযা ডিঙ্গিয়ে আত্মহত্যার কথা কখনোই মাথায়ই আসবে না
তারপরও মানুষ ধর্ম থেকে নাক সিটকিয়ে সামাজিক দায়বদ্ধতাকে দায়ী করছে বার বারএটাই নিয়মচট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মাদ আফজাল হোসেন বলেন, বয়সের কারণে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে ধৈর্য্যধারণের ক্ষমতা কম বলে তারা বেশি আত্মহত্যা করেকিন্তু মজার বিষয় হলো, এর থেকেও অনেক ছোট ছোট ছেলে মেয়ে মাদরাসায় প্রচন্ড চাপে থেকে লেখাপড়া করেও কখনও আত্মহত্যার কথা চিন্তাও করে নাধৈর্য্যের এক বিমুর্ত প্রতীক যেন এরাতবে আধুনিক সমাজ কিংবা আধুনিক শিক্ষায় থেকেও এরা কেন ধৈর্য্যহীনতার মাঝে বড় হয়?
যেই কারণগুলোকে আমরা দায়ী করছি তা থেকে প্রতিকারের উপায় কি? বিদেশি সংস্কৃতিকে বারবার দায়ী করা হয়বিদেশি সংস্কৃতিকে যদি বাদ দেয়া হয় তবে দেশি সংস্কৃতি কি এর প্রতিকারের পথ? এইতো কিছুদিন আগে ইন্ডিয়ান সিরিয়াল দেখা নিয়ে মনোমলিন্যের কারনে মায়ের সাথে অভিমান করে মেয়ে আত্মহত্যা করেকিন্তু এই দেশি বিদেশি সিরিয়াল দেখে যে আমাদের কি পরিমাণ চারিত্রিক অবক্ষয় ঘটছে তা কি একবার ভেবে দেখেছি?
পত্রিকার মাধ্যমে জানা যায়, ভালো কলেজে ভর্তি হতে না পারার অভিমানে গত ১ †m‡Þ¤^i আত্মহত্যা করে এসএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পাওয়া চন্দনাইশের তানিয়া সুলতানা মুনিনপরদিন পরীক্ষা খারাপ হওয়ায় বাবা ও সৎ মায়ের বকুনির ভয়ে আত্মহত্যা করে সীতাকুন্ডের নবম শ্রেণির ছাত্র তাসফিএর আগে তুচ্ছ ঘটনায় গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে বেসরকারি একটি মেডিকেল কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী নোভা ও কলেজ ছাত্রী প্রেয়সী
অদ্ভুদ ব্যাপার হলো, এর বিপরীতে ধর্মীয় (মাদরাসা) শিক্ষায় যারা শিক্ষিত হচ্ছে তারা যতই খারাপ রেজাল্ট করুন না কেন আত্মহত্যার করার মত কোন ঘটনা কেউ কোনদিন পত্রিকায় দেখেছে বা শুনেছে বলে জানা নাইএর কারণ কি? কারণ একটাই, তা হলো ধর্মীয় শিক্ষাতাদের মগজে এ কথা গ্রোথিত হয়ে গেছে যে, ধর্মীয়ভাবে আত্মহত্যা মহাপাপহাদীস কোরআনে বিভিন্ন জায়গায় এ ব্যাপারে শাস্তির কথা বলা হয়েছেতাছাড়া বেঁচে থেকে সমস্ত ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠার মুলমন্ত্রও এরা পায় ধর্মীয় শিক্ষা থেকেতাই তারা যতই তুচ্ছ ঘটনা ঘটুক না কেন আত্মহত্যার ব্যাপারে কখনই তারা দুঃসাহস তো দূরের কথা কল্পনাই করতে পারে না
আধুনিক সমাজ ব্যবস্থা যাদেরকে হীন মনে করে, যেই শিক্ষা ব্যবস্থাকে মধ্যযুগীয় মনে করে,বাস্তবিকভাবে তারাই মানসিকভাবে শক্তিশালী এবং বড় হৃদয়ের অধিকারীনিতান্ত তুচ্ছ হোক বা বড় কোন ঘটনাই হোক না কেন এতে তারা ধৈর্যহীন হয়ে আত্মহত্যার মতো কোন সিদ্ধান্ত নেয় নাএমনকি এমন কোন চিন্তাও কখনও করেনা
ইদানিং প্রায়ই পত্রিকায় দেখা যায় মিডিয়ার বড় বড় তারকারা আত্মহত্যা করছেযাদেরকে আধুনিক সমাজ ব্যবস্থা সমাজের উঁচু স্তরের লোক মনে করে, যাদের পার্থিব সব উপকরণ আছে, তারা কেন আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়?
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের হিসাব অনুযায়ী, গত সাত মাসে ১১০ জনের বেশি মানুষ আত্মহত্যা করেছেনএকই সময়ে আত্মহত্যার ব্যর্থ চেষ্টা করে আহত হয়ে চিকিৎসা নিতে আসেন পাঁচ শতাধিক মানুষচমেক হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক প্রদীপ কুমার নাথ বলেন, সামপ্রতিক সময়ে ফরেনসিক বিভাগে আত্মহত্যাজনিত লাশ বেশি আসছেযাদের লাশের ময়নাতদন্ত করতে আনা হয়েছে তাদের বেশির ভাগেরই বয়স হচ্ছে ১৫ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে
সব তরুন বয়সের ছেলে মেয়েকি অভাব তাদের? যদি পারিবারিক দূরুত্ব বা ভালোবাসাকে দায়ী করা হয় তবে তার সমাধানও ইসলামএ ব্যাপারে ইসলামে চমৎকার নীতিমালা রয়েছেছেলেমেয়েদের অধিকার বা পিতা মাতার অধিকার সম্পর্কে ইসলামে সর্বোন্নত নীতিমালা নির্ধারন করা রয়েছেঅথচ আমরা এ পথ থেকে সরে এসে ভুল পথে পাথেয় খোঁজ করছি
এছাড়াও প্রেম ভালোবাসা জনিত কারণেও অনেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়যা প্রায়শই পত্রিকায় চোখে পড়েএর বিপরীতে আমি আবারও ধর্মীয় (মাদরাসা) শিক্ষাকে এগিয়ে রাখবপ্রেম ভালোবাসা জনিত ঘটনা মাদরাসার ছেলে মেয়েদের দ্বারা ঘটা এবং তা থেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়া তো কল্পনাই করা যায় নাএর  প্রধান কারণ হলো বেপর্দা চলাফেরা, আধুনিকতার নামে অশ্লীলতা আর সেক্যুলার সহশিক্ষা (ছেলে মেয়েদের একসাথে পাঠদান)যার মাধ্যমে ছেলে মেয়েরা খুব সহজেই প্রেম ভালোবাসায় জড়িয়ে পড়েআর অনেক ক্ষেত্রে পরিণতি হয় আত্মহত্যা
চমেক হাসপাতাল সূত্রে আরো জানা যায়, ২০০২ সালে চট্টগ্রামে ৬৭৭ জন আত্মহত্যার চেষ্টা করেআর ২০০৩ সালে ৭৪৫, ২০০৪ সালে ৮০৩, ২০০৮ সালে ১৭৫১ ও ২০০৯ সালে ১১৩৪ জন আত্মহত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়আত্মহত্যা করবে বলে চিন্তা করে আরও ১০ গুণ বেশি মানুষমানসিকভাবে
বিপর্স্তদের মধ্যে ৭০ শতাংশই আত্মহত্যা করেদিনকে দিন এর মাত্রা বেড়েই চলছেআর এর অধিকাংশই দেখা যায় স্কুল কলেজ পড়ুয়া লোকজন
তাই পুরো ব্যাপারটা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সাধারনত যে সকল কারণে মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় তার বিপরীতে রয়েছে ধর্মীয় শিক্ষার এক কঠিন রক্ষাকবচ  যার দ্বারা মানুষ আত্মহত্যার মত ঘৃনিত নোংরা কাজ না ঘটিয়ে জীবনকে সুন্দর, সাবলীলভাবে উপভোগ করার এক চমৎকার মওকা পেয়ে যায়আর ইহকালীন ও পরকালীন এক অভাবনীয় সাফল্য তো রয়েছেই

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আরো দেখুন

Related Posts with Thumbnails