ইসলাম
একটি পরিপূর্ন জীবন ব্যবস্থা। ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এমন কোন
শাখা যেখানে ইসলামের বিধান নেই। আর এই বিধান পরিপূর্ন ভাবে পালন করার নামই হচ্ছে ইসলাম। আর এটাই আল্লাহর
হুকুম। এ
প্রসংগে আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআন শরীফে বলেন, ”তোমরা পরিপূর্নভাবে ইসলামে প্রবেশ কর”। এ আয়াত দ্বারাই স্পষ্ট হয় যে আমাদেরকে পরিপূর্নভাবে ইসলামে
প্রবেশ করতে হবে। এ ব্যাপারে কোন অবহেলার অবকাশ নেই। আর এই হুকুমের যে বিরোধীতা করবে সে পথভ্রষ্ট, যালেম। আলোচ্য এই
নিবন্ধে ইসলামের কতিপয় হুকুম নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে যা সম্পর্কে আমাদের ব্যাপক
অবহেলা রয়েছে।
প্রথমেই
আলোচনা করা যাক পোষাক সম্পর্কে। ইসলামে আমাদের পোষাক সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে। আমি এ
ব্যাপারে বিস্তারিত যাবো না। এখানে শুধু কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে।
পোষাক এর বিধানঃ
শরীর
ঢাকা প্রত্যেকের উপর ফরজ। আর তারও নির্ধারিত সীমারেখা রয়েছে। পুরুষের সতর হল নাভীর উপর হইতে হাটুর নীচ থেকে টাকনুর উপর
পর্যন্ত। টাখনুর নীচে কোন ক্রমেই কাপড় পরিধান করা যাবে না। এ প্রসংগে একটি হাদিস হলঃ
. . .
. . . . . . . . . . জাবের ইবনে সুলাইম (রা) বলেন, আমি বললাম, আমাকে
উপদেশ দিন। তিনি (রাসুলুল্লাহ সাঃ) বললেন, তুমি কাউকে কখনো গালি দিবে না। .. . . . .. . ভাল ও নেকির কাজকে তুচ্ছ মনে করবে না। তোমার ভাইয়ের সাথে হাসি মুখে কথা বলাও একটি নেকির কাজ। ইযার বা তহবন্দ
পায়ের গোছার অর্ধেক পর্যন্ত উঠাবে। এতটুকু উঠাতে তোমার অসুবিধা হলে তবে তুমি অন্তত টাখনু গিরা
পর্যন্ত উঠাবে। লুঙ্গি ঝুলিয়ে রাখা থেকে সর্তক থাকবে। কারন এটা হচ্ছে অহংকারের চিহ্ন। আর নিশ্চয়ই আল্লাহ্ অহংকার পছন্দ করেন না। . . . . . .(আবু দাউদ, তিরমিযী)
এ হাদিস দ্বারা
প্রতিয়মান হয় যে টাখুনুর নীচে কাপড় পরিধান করা যাবে না। আর এ ব্যাপারে আমাদের ইমামরাও একমত। কিন্তু আজকাল আমরা
এই ফরজ হুকুমের ব্যাপারে যথেষ্ট উদাসীন। অত্যন্ত নগন্য সংখক লোক আছে যারা এই হুকুম পালন করছে। আমারা অনেকেই এই
হুকুমকে শুধু নামাজের জন্য সীমাবদ্ধ করে ফেলেছি। কিন্তু এই হুকুম শুধু নামাজের জন্যই নয় নামাজের
বাহিরেও সার্বক্ষনিক ফরজ হুকুম। আমাদের মাঝে আরো কিছু লোক আছে যারা নামাজের মধ্যেও এই হুকুম
লংঘন করি। ব্যাপারটা এতই হালকা ভাবে আমরা নেই যে অনেকটা থু থু ফেলা বা নষ্ট কাগজ ফেলে দেয়ার
মত সাধারন বিষয়। কিন্তু এ ব্যাপারে হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেছেন, একবার এক ব্যক্তি
টাখনুর নিচে লুঙ্গি ঝুলিয়ে নামায পড়ছিল। রাসূলুল্লাহ (স) তাকে বললেন, যাও, আবার ওযু কর। সে গিয়ে পুনরায় ওযু
করে এল। তিনি আবারও
বললেন, যাও, আবার ওযু কর। এক ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি কেন তাকে ওযু করে আসার নির্দেশ দিচ্ছেন?
এরপর আবার চুপ করে থাকছেন? তিনি বললেন, এ ব্যক্তি তার লুঙ্গি টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে নামায
আদায় করত। অথচ আল্লাহ্ এমন লোকের নামায কবুল করেন না, যে তার লুঙ্গি ঝুলিয়ে নামায আদায় করে। (আবু দাউদ)
অসংখ্য হাদিস
থেকে এ প্রসংগে ব্যাপক তাগিদ পাওয়া যায়। কঠোর ধমকি এবং আযাব এর কথাও রয়েছে। তারপরও আমরা ব্যাপক ভাবে উদাসিন। হযরত আবুযর (রা)
থেকে বর্ণিত নবী করিম (স) ইরশাদ করেছেন, তিন শ্রেনীর লোকের সাথে আল্লাহ্ কেয়ামতের
দিন কথা বলবেন না, তাদের প্রতি (রহমতের দৃষ্টিতে) দেখবেনও না এবং (গুনাহ থেকে) তাদের
পবিত্রও করবেন না। আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি। বর্ণনাকরী বলেন, এরপর রাসূলুল্লাহ (স) এ কথাগুলো
তিনবার বলেন। হয়রত আবুযর (রা) বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! এ সব বিফল মনোরথ ও বঞ্চিত লোক কারা? তিনি
বললেন ১. যে অহংকার বশত কাপড় ঝুলিয়ে দেয়.......(মুসলিম)। এ হাদিস দ্বারা স্পষ্ট বোঝা যায় যে, আল্লাহ তায়ালা
এই শ্রেনীর লোকদের প্রতি দৃষ্টিপাত করবেন না। তাদেরকে গুনাহ থেকে পবিত্রও করবেন না। স্পষ্টই তার জন্য
জাহান্নাম। যারা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পাবন্দি তারা এই হাদিসটা একটু গভীর ভাবে লক্ষ করি , বোঝার
চেষ্ঠা করি। এত কষ্ট করে নামাজ পড়ছি, নামাজের মধ্যে এই হাদিসের আমল করছি, নামাজের বাহিরে কেন
করছি না? কেন নিজেকে জাহান্নামের দিকে ঠেলে দিচ্ছি? এহেন অবহেলা কখনো কাম্য নয়। আরো একটি গুরুত্বপূর্ন
হাদিস হল হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী করীম (স) ইরশাদ করেছেন,
দু টাখনুর নিচে লুঙ্গী যে পরিমান স্থান ঢেকে রাখবে, তা জাহান্নামে যাবে। (বুখারী) এছাড়াও অসংখ্য
হাদিসে রাসূল (সাঃ) এর ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। আমাদের মধ্যে হতে অনেকেই হয়তো ভাবি এভাবে কাপড়
উঠালে দেখতে খারাপ লাগবে, মান সম্মান কমে যাবে, কিংবা সমাজের চোখে হেয় হয়ে যাবো। আসলে কি তাই। এ ক্ষেত্রে বর্তমান
যমানায় উল্লেখযোগ্য উদাহরন হল ডাঃ জাকির নায়েক। তিনি তার কাপড় টাকনুর উপরই পরিধান করেন। এছাড়াও আমাদের আশেপাশে
অনেকেই এভাবেই পরিধান করেন। আর মূলত কে করল বা কে করল না সেটা নিয়ে আমাদের ভাবলে চলবে না। আমাদেরকে শরীয়তের
গন্ডির মধ্যেই চলতে হবে। এছাড়াও এটা মূলত মেয়েদের জন্য হুকুম যে তারা টাকনুর নিচে কাপড় পরিধান করবে টাকনুর
উপর কাপড় উঠাবে না। আর বর্তমান যমানায় আমরা মেয়েদের এই হুকুম নিজেদের জন্য জারি করে নিয়েছি। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লহ (সাঃ) নারীদের বেশধারণকারী পুরুষ এবং পুরুষের বেশধারণকারী নারীদের প্রতি অভিসম্পাত করেছেন। (বুখারী) এটা অত্যন্ত করুন পরিণতি যে রাসূল কারো প্রতি অভিসম্পাত করেছেন। আর সাভাবিকভাবেই তার জন্য জাহান্নাম।
দাড়ি ও মোচের বিধানঃ
এবার আরেকটি
গুরুত্বপূর্ন হুকুম দাড়ি সম্পর্কে জানি। অনেকেরই ভ্রান্ত ধারনা আছে যে দাড়ি রাখা সুন্নত। কিন্তু শরীয়তে মুহাম্মাদীয়াতে
এই দাড়ি রাখা প্রকৃত পক্ষে ওয়াজিব। তবে বিষয়টি হাদিছ দ্বারা প্রমানিত বিধায় দাড়ি রাখাকে সাধারনত
সুন্নত বলা হয়ে থাকে। তাই সুন্নত হলেও অবজ্ঞা করা বা হালকা ভাবে নেয়ারতো কিছু নেই।
হযরত আবু
হুরায়রা (রা) হইতে বর্নিত, হযরত রাসুলে পাক (সাঃ) বয়ান করেছেন, পবিত্র ইসলামের সেই
দশটি ফিতরাতে ছালিমার অন্তর্ভূক্ত হলো মোচকে খাটো করা ও দাড়িকে বড় করা। যেহেতু অগ্নি উপাশকগণ
তাদের মোচকে বড় করে ও দাড়িকে খাটো করে থাকে, তাই তাদের বিরোধিতা করে দাড়ি বাড়াও,
মোচ বিনাশ কর। আরেকটি হাদিসে রাসুল কঠোর ভাষায় বলেছেন, যে মোচ ছাটে না সে আমার উম্মতভুক্ত নয়
(তিরমিযী)। আর আজ আমরা মোচকে বাড়িয়ে দিচ্ছি আর দাড়ি কামিয়ে ফেলছি। অধিক সংখ্যক লোক দাড়ি মোচ কিছুই রাখে না। আর এখানেও তারা নারীর
সাদৃশ্য গ্রহন করছে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক ব্যাপার আজ আমরা মূসলমান দাবীদার হয়েও, সুন্নতের বড় বড়
কথা বলেও সেই নিষিদ্ধ মুশরিকদের অনুকরন করে করে নবী ও রাসূলের তরীকা বর্জন করে গর্ববোধ
করি। যদি মুসলমানই
না থাকলাম তবে এ গর্ব কি কাজে আসবে।
এটা অত্যন্ত
দুঃখজনক যে আজ আমাদের এই দাড়ি না থাকার কারনে আমাদেরকে মুসলমান বলে চিহ্নিত করতে
খুবই কষ্ট হয়। কাউকে সালাম দিতে গেলে প্রথমেই চিন্তা করতে হয় যে এই লোকটা মুসলমান কিনা? আফসোস
এত কিছুর পরও আমরা নিজেদের মুসলমান বলে দাবী করি। জানিনা তা কিসের ভিত্তিতে? আল্লামা ইবনে
আছাকের সহ কতিপয় মুহাদ্দিছ হযরত হাসান বছরী মুরছাল হাদিছ (যা আমাদের মতে গৃহীত)
নকল করেছেন যে, দশটি কারনে লুত সমপ্রদায় ধ্বংস হয়েছিল তন্মধ্যে দুটি হল দাড়ি
কামানো ও মোচ বড় করা। এ হাদিছ দ্বারা পরিষ্কার বুঝা গেল যে, এদুটি বদ অভ্যাস, গোটা জাতির ধ্বংস টেনে
আনে। কাজেই
আমাদের এই অভ্যাস কতখানি ত্যাগ করা উচিৎ তা আমাদের বার বার ভেবে দেখা উচিৎ।
অনেকে বিভিন্ন
সমস্যা উল্লেখ করেন। বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা দেখান। কিন্তু আমার আল্লাহ ও তাঁর রাসূল আগে না আমার দুনিয়া আগে। কাতাবে ওহী জায়েদ
ইবনে ছাবেত বর্ণনা করেছেন যে, একদা কিছরা বাদশার পক্ষ থেকে ২ জন দাড়ি বিহীন লোক হুজুর
(সাঃ) এর দরবারে হাজির হলে ঘৃনায় তাদের দিকে দৃষ্টি না করেই বললেন তোমাদের অমঙ্গল হোক,
তোমাদেরকে এ আকৃতি করতে কে বাধ্য করেছে? তারা জবাবে বললো আমাদের বাদশা কেছরা। হুজুর (সাঃ) বললেন,
কিন্তু আমার মাওলা আল্লাহ আমাকে দাড়ি বড় ও মোচ খাটো করতে আদেশ দিয়েছেন। আজ আমরাও অনেকে এই
জাতীয় কথা বলে থাকি যে, আমার স্ত্রী নিষেধ করেছে, আমার বাবা, মা, বন্ধু বান্ধব নিষেধ
করে, তারা খারাপ বলে। উক্ত হাদিসে বেশ কিছু ব্যাপার পরিলক্ষিত হয় যেমনঃ রাসূল (সাঃ) তাদের দিকে দৃষ্টি
করেন নি। তাদের অমঙ্গল কামনা করেছেন এবং আল্লাহর কি হুকুম তা তিনি বলে দিয়েছেন। আজ আমরা যারা দাড়ি
রাখিনা তারা একবার ভেবে দেখি আমরা যদি এই অবস্থায় মৃত্যু বরণ করি তবে রাসূল কি আমাদের
দিকে ফিরে তাকাবেন? তিনি কি আমাদের মঙ্গল কামনা করবেন? আর যারা আল্লাহর আইন অমান্য
করে তাদেরও শাস্তি কি?
এখানে আরো
একটি বিষয় গুরুত্বপূর্ন তা হলো, দাড়ি কাটা হলো ২৪ ঘন্টার গুনাহ। আপনি তওবা না করা
পর্যন্ত এ গুনাহ থেকে নিষকৃতি পাচ্ছেন না। আমরা অনেকেই প্রায়ই ভাবি আমিতো তেমন কোন গুনাহ করিনা। কারো হক মারিনা,
জিনা করি না , চুরি করি না। কিন্তুু দাড়ি কেটে যে আমি ২৪ ঘন্টাই গুনাহের কাজে লিপ্ত আছি
তা কখোনো ভেবে দেখিনা। এছাড়া মারাত্নক বিষয় হলো আমরা যারা দাড়ি বিহীন অবস্থায় নামাজ আদায় করছি তা কতটুকু
আল্লাহর দরবারে গ্রহনযোগ্য? দাড়ি কাটা একটি কবীরা গুনাহ। যেমন গায়রে মাহরাম মেয়ে লোক দেখা কবীরা গুনাহ। আমরা যারা নামাজ
পড়ি তারা কখোনোই নামাজরত অবস্থায় সাধারনত এদিক ওদিক না তাকানোর চেষ্ঠা করি। আর যদি পাশে কোন
মেয়ে মানুষ থাকে তবেতো না তাকানো নিয়ে কারো প্রশ্ন নেই। আমারা নামাজে এই কবীরা গুনাহ লিপ্ত হতে ভয় পাই,
ভাবি নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে। তবে নামাজের মধ্যে দাড়ি কাটা অবস্থায় আছি, গুনাহের মধ্যে লিপ্ত
আছি, এ অবস্থায় কিভাবে এই নামাজ কবুল হতে পারে?
পর্দার হুকুম
ও নজর হেফাজতঃ
বলুন মু’মিনদেগকে,
তাহারা যেন নিজেদের চক্ষু আনত রাখে এবং হেফাযত করে তাহাদের লজ্জাস্থানের। ইহা হইল তাহাদের
জন্য পবিত্রতর। নিশ্চয় আল্লাহ্ অবগত আছেন তাহারা যাহা করে। এইরুপ বলুন ম’মিন নারীদিগকে, তাহারা যেন আনত রাখে
তাহাদের চক্ষুকে এবং হেফাজত করে তাহাদের লজ্জাস্থানের এবং প্রকাশ না করে নিজেদের শোভার
স্থানসমূহকে, যাহা সাধারণত খোলা থাকে তাহা ব্যতীত এবং তাহারা যেন তাহাদের মাথার চাদরকে
বুকের উপর টানিয়া দেয় (সূরা নূর)
উপরোক্ত আয়াতে
আমাদেরকে কি করতে হবে তা খুবই পরিষ্কারভাবে বলে দেয়া হয়েছে। এরপরও আমরা সবচেয়ে বেশী গাফেল এ ব্যাপারেই। আজ মুসলমানদের খুব
কম সংখ্যক লোক পর্দা রক্ষা করে চলাচল করে। আমি এখানে যারা ঢালাওভাবে বেপর্দায় চলাচল করে তাদের কথা বলব
না। আমি শুধু
তাদেরকে বলব যারা পর্দা রক্ষা করে চলাচল করে। আমরা যারা পর্দা করে চলি তারা কেন পর্দা করি? অবশ্যই
তা আল্লাহ্ তায়ালার ফরজ হুকুম। তবে কেন এ নিয়ে আমাদের এত অবহেলা। আজ মুসলমান মহিলারা বেপর্দায় রাস্তা ঘাটে চলাফেরা
করে। আর তারই ফলশ্রুতিতে
পুরুষরাও তাদের নজরকে যথাযথ হেফাজত করতে পারছে না। শুধু কি তাই, অত্যন্ত দুঃখ জনক আজ মুসলমান মহিলারা
যেসব পোশাক পরিধান করে রাস্তায় বের হয় তা দেখে বোঝার উপায় নেই যে, এরা মুসলমান কিনা?
বরং মুসলমানরাই আজ বিধর্মীদের থেকে বেশী এগিয়ে আছে। এ প্রসংগে হযরত হাসান বসরী মুরসালরুপে বর্ণনা করেন
যে, (সাহাবীদের নিকট হইতে) আমার নিকট বিশ্বস্ত সূত্রে পৌছিয়াছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)
বলিয়াছেনঃ আল্লাহ্ লা’নত করেন (ইচ্ছাকৃত) দৃষ্টিকারী এবং যে (ইচ্ছাকৃতভাবে) দৃষ্টিতে
পতিত হয় তাহার প্রতি। - বায়হাকী শোআবুল ঈমানে। এই হাদিস দ্বারা স্পষ্ট প্রতিয়মান হয় যে, আজ আমরা যারা ইচ্ছাকৃত
ভাবে নিজেদেরকে বেপর্দা ভাবে অন্য পুরুষের সামনে উপস্থাপন করছি এবং আমরা যারা ঐ সকল
মেয়ে মানুষদেরকে ইচ্ছাকৃত ভাবে দেখছি তারা দুজনই আল্লাহ্ তায়ালার লানতপ্রাপ্ত। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক
যে একজন মুসলমান আল্লাহ্ তায়ালার লানত প্রাপ্ত হয়। কিন্তু আজ আমরা যারা পর্দা করছি তারাও অধিকাংশ
ক্ষেত্রে নিজেদেরকে অন্যের সামনে ইচ্ছাকৃত ভাবে আকর্ষনীয় ভাবে উপস্থাপন করছি। অনেক ক্ষেত্রেই আমরা
বাহিরে বোরকা পরে বের হলেও লক্ষস্থলে পৌছানোর পর আমরা নিজেদের আসল রুপ অন্যের সামনে
ইচ্ছাকৃত ভাবে প্রকাশ করে দেই। তাহলে কি লাভ এই পর্দা রক্ষা করে ? হযরত ইবনে মাসাউদ (রাঃ) নবী
করিম (সাঃ) হইতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলিয়াছেনঃ নারী হইলে আওরাত বা আবরণীয় জিনিস। যখন সে বাহির হয়
শয়তান তাহাকে চোখ তুলিয়া দেখে। - তিরমিযী
আমরা
অধিকাংশ পুরুষ আছি যারা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পাবন্দ তারা কেন নামাজ পড়ি? আল্লাহর
রহমতের আশায়, জান্নাতে যাওয়ার আশায়। আমরা আমাদের অধিনস্ত মহিলাদেরকে কিভাবে পর্দা করাই। শুধুমাত্র
বাহিরে বের হলে বোরকা পড়াই। আবার অনেকে তাও করে না। কিন্তু হাদিসে রাসূল (সাঃ) বলেছেন, ”দাইয়ুস
জান্নাতে যাবে না।” সাহাবীগণ আরজ করলেন - দাইয়ুস কে? নবীজি (সাঃ) বললেন - দাইয়ুস সেই ব্যক্তি, যে
লক্ষ্য রাখে না যে, তার বাড়ীতে কে আসলো, আর কে গেলো। অর্থাৎ যে তার অধিনস্ত মহিলাদেরকে পর্দায় রাখে
না শরীয়তের পরিভাষায় সেই দাইয়ুস। এই হাদিসের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় আমরা যারা নামাজ পড়ছি,
যে লক্ষ অর্জনের জন্য নামাজ বা অন্যান্য হুকুম পালন করছি, সেই লক্ষ পৌছানো আদৌ সম্ভব
নয় যদি আমরা দাইয়ুস বলে পরিগণিত হই।
আজকাল অনেকেই
পর্দা তথা বোরকাকে একটা ফ্যাশানবল পোশাকে পরিনত করে নিয়েছে। বর্তমানে যেভাবে এই বোরকা তৈরী করা হয় তাতেতো পর্দার
হক আদায় হয়ই না, বরং এর দিকে আরো দৃষ্টি বেশী পতিত হয়। আরেকটি ব্যাপার হল অনেক মহিলাকে দেখা যায় নিজে
পর্দা করে কিন্তু সাথে নিজের বালেগা মেয়ে থাকে তাকে পর্দা করায় না। আমার একটা জিনিস
বোধগম্য হয় না যে, মা নিজে পর্দার ব্যাপার বুঝতে পারল কিন্তু মেয়ের ব্যাপারে তা
বুঝতে পারল না, এটা কেমন?
আজকাল
আমরা সবাই পর্দাকে একটা গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ করে ফেলেছি। আর তা হলো শুধুমাত্র বাহিরে গেলে বোরকা পরা। কি লাভ এতে? বরং
ঘরের মধ্যে বসে আমরা যে পরিমান গায়রে মাহরাম এর সাথে সাক্ষাত করছি তা রীতিমত ভয়ংকর। হযরত ওকবা ইবনে
আমের (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলিয়াছেন, তোমরা নারীর নিকট যাইবে না। এক ব্যক্তি বলিল,
ইয়া রাসূলুল্লাহ, দেবর সম্পর্কে বলুন। (সে কি ভাবীর নিকট যাইতে পারে?) হুযুর (সাঃ) বলিলেন, সে তো
সাক্ষাৎ যম। - মোত্তাঃ। এই হাদিস এ পর নারীর নিকট গমন করতে নিষেধ করা হয়েছে। আর একটি বিষয় যা আমাদের মাঝে খুবই প্রকট আকার ধারণ
করেছে, তা হলো দেবর ভাবীর সম্পর্ক। আমরা শুধু দেবর ভাবীই নয়, বেআই বেআইন কিংবা দুলাভাই শ্যালিকা
সবাই এ ব্যাপারে খুবই স্পর্শকাতর। কিন্তু মজার বিষয় হলো এই আমরা যারা অবলীলায় এই সব সম্পর্ক গড়ে
তুলে পর্দার বিধান লংঘন করছি তারাই আবার বোরকা পরে পর্দা রক্ষা করার হীন প্রয়াশ চালাই।
আজকাল আরো
একটি বিষয় লক্ষ করা যায় তা হলো সুগন্ধি ব্যবহার। রাসূল (সাঃ) বলেন, ”মহিলারা যখন সুগন্ধি দ্রব্য
ব্যবহার করে কোন লোকালয়ের নিকট দিয়ে যাতায়াত করে, তখন সে একজন ব্যভিচারিনী মহিলা বলে
বিবেচিত হয়।” আজ অধিকাংশ মেয়েলোক সুগন্ধি ব্যবহার করে রাস্তায় বের হয় শুধুমাত্র অন্যকে আকৃষ্ট
করার জন্য। আফসোস তারা ব্যভিচারিনী না হয়েও ঐ পর্যায় ভুক্ত হয়ে গেল।
আবার অনেক
পুরুষ আছে যারা পর্দা তথা নিজের নজরকে হেফাজত করে চলার চেষ্ঠা করে তারাও অনেক
সময় সঠিক বুঝ না থাকার কারনে বেপর্দা হয়ে পড়ে। হযরত আবু সায়ীদ খুদরী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ
(সাঃ) বলিয়াছেনঃ এক পুরুষ যেন অপর পুরুষের আবরনীয় অঙ্গের প্রতি নজর না করে। এইরুপে নারীও
যেন অপর নারীর আবরনীয় অঙ্গের প্রতি নজর না করে এবং এক পুরুষ যেন অন্য পুরুষের সাথে
এক লেপের নীচে না শোয়। এরুপ এক নারীও যেন অপর নারীর সাথে এক লেপের নীচে না শোয়। - মুসলিম। কিন্তু আমরা অনেক সময় ফুটবল কিংবা এই জাতীয় খেলা
(যেখানে নারী বা পুরুষ এর আবরনীয় অঙ্গ নজরে চলে আসে) অবলীলায় ঘন্টার পর ঘন্টা বসে বসে
দেখছি। কিন্তু
আমরা পর্দা বলতে অনেক সময় শুধুমাত্র মহিলাদেরকে বা পুরুষদেরকে দেখা থেকে বিরত
থাকাকে বুঝি। কিন্তু মহিলা মহিলা বা পুরুষ পুরুষ যে পর্দা রক্ষা করে চলতে হয় তা আমরা অনেকেই
জানিনা বা জেনেও মানিনা। এ প্রসংগে আরো একটি হাদিস হল, হযরত আলী (রাঃ) হইতে বর্ণিত আছে, একদা
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁহাকে বলিলেন, হে আলী! তোমার রাণ প্রকাশ করিও না এবং জীবিত ও
মৃত কাহারও রাণের প্রতি নজর করিও না। - আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ্।
এরপরও
যদি চোখ পড়ে যায় তবে এ প্রসংগে হযরত জারীর ইবনে আবদুল্লাহ্ (রাঃ) বলেন, আমি
রাসুলু্ল্লাহ (সাঃ) হঠাৎ দৃষ্টি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করিলাম। তিনি আমাকে চক্ষু ফিরাইয়া লইতে বলিলেন। - মুসলিম।
এছাড়াও অসংখ্য
হাদিসে এ ব্যাপারে কঠোর আযাব এর কথা বলা হয়েছে। এক হাদিসে বর্ণিত রাসূল করিম (সাঃ) বলেছেন, ”যে
মহিলা হায়া পর্দা রক্ষা করে চলে না সে জান্নাতে যাবে না। ” অন্য এক হাদিসে রাসূল (সাঃ) বলেছেন, সেই আল্লাহ্র
কছম যার হাতে আমার জীবন , যে তার ছতর অঙ্গের যে অংশ অবৈধভাবে কাউকে দেখাবে, সে অঙ্গটুকু
জাহান্নামের আগুনে না পোড়ানো পর্যন্ত সে বেহেশতে যাবে না।
আফসোস আজ
আমরা পর্দাতো করিইনা আর পরহেজগারীর ব্যাপারতো কল্পনা করা যায় না। বাহ্য ইবনে হাকীম
তাঁহার বাপ ও দাদা মুআবিয়া পরম্পরায় বর্ণনা করেন, রাসূলূল্লাহ (সাঃ) একদা বলিলেন, তোমার
বিবি ও তোমার দাসী ছাড়া অপরের নিকট তোমার আবরনীয় অঙ্গকে রক্ষা করিবে। আমি বলিলাম, ইয়া
রাসূলুল্লাহ! বলুন, যখন কোন ব্যক্তি একা থাকে। তিনি বলিলেনঃ তখন আল্লাহকেই অধিক লজ্জা করা উচিত। - আবু দাউদ, তিরমিযী,
ইবনে মাজাহ্। এক হাদিসে আছে, যার লজ্জা নাই তার ঈমান নাই। আল্লাহ আমাদের ঈমান নসীব করুক।
রুপ চর্চাঃ
আজকাল মহিলা
কিংবা পুরুষ রুপ চর্চার প্রতি ব্যাপক ভাবে দুর্বল। রুপ চর্চা জায়েজ হলেও তা শরীয়তের গন্ডির মধ্যে
থেকে করতে হবে। যা শরীয়ত সম্মত নয় তা কখনোই গ্রহনযোগ্য নয়। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) পরচুলা ব্যবহারকরিনী, তা প্রস্তুতকারিনী, উল্কি অঙ্কককারিনী এবং যে নারী উল্কি অঙ্কন করায় তাদের সবাইকে অভিসম্পাত করেছেন। (বুখারী, মুসলিম) আজ আমরা অনেকেই পরচুল ব্যাবহার করি। অভিজাত শ্রেনীর ছেলে মেয়েরা সহ অনেকেই তাদের দেহে উল্কি অংকন করায়। যা আমাদের
আল্লাহ ও রাসূল দ্বারা অভিশপ্ত করেছে। পরচুল প্লাষ্টিক বা অন্য কোন কিছুর দ্বারা তৈরী হলে ব্যবহার জায়েজ হলেও মানুষের চুল দ্বারা তৈরী পরচুল কোন ক্রমেই জায়েজ নেই। হযরত আসমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, এক মহিলা নবী করিম (সাঃ) কে বলল , ইয়া রাসূলুল্লাহ ! আমার কন্যার বসন্ত রোগ হয়েছে। ফলে তার মাথার চুল উঠে গিয়েছে। আর আমি তাকে বিয়ে দিয়েছি। তার মাথায় কি পরচুলা লাগাতে পারি? তিনি বললেন, আল্লাহ তায়ালা পরচুলা ব্যবহারকরিনী এবং যে ব্যবহার করায় উভয়কে অভিসম্পাত করেছেন। (বুখারী, মুসলিম) এ হাদিসে স্পষ্ট বোঝা যায় যে তা কোন সুরতেই জায়েজ নেই। কিন্তু আজ আমরা বিজাতীয় এই সব সংস্কৃতি সাদরে গ্রহন করেছি।
আল্লাহ ও রাসূল দ্বারা অভিশপ্ত করেছে। পরচুল প্লাষ্টিক বা অন্য কোন কিছুর দ্বারা তৈরী হলে ব্যবহার জায়েজ হলেও মানুষের চুল দ্বারা তৈরী পরচুল কোন ক্রমেই জায়েজ নেই। হযরত আসমা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, এক মহিলা নবী করিম (সাঃ) কে বলল , ইয়া রাসূলুল্লাহ ! আমার কন্যার বসন্ত রোগ হয়েছে। ফলে তার মাথার চুল উঠে গিয়েছে। আর আমি তাকে বিয়ে দিয়েছি। তার মাথায় কি পরচুলা লাগাতে পারি? তিনি বললেন, আল্লাহ তায়ালা পরচুলা ব্যবহারকরিনী এবং যে ব্যবহার করায় উভয়কে অভিসম্পাত করেছেন। (বুখারী, মুসলিম) এ হাদিসে স্পষ্ট বোঝা যায় যে তা কোন সুরতেই জায়েজ নেই। কিন্তু আজ আমরা বিজাতীয় এই সব সংস্কৃতি সাদরে গ্রহন করেছি।
অনেক মহিলা আছে যারা বোরকা পড়ে পর্দা করে অথচ তারা তাদের হাত পায়ের নখ বড় রাখে, ভ্রু প্লাগ করে,চুল কাটে, নেইল পালিশ ব্যবহার করে। নেইল পালিশ ব্যবহার জায়েজ থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা তোলা হয় না। ফলে নামাজ কাজা হয়ে যায়। এক হাদিসে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসাউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, যেসব নারী দেহে উল্কি এঁকে নেয়, আর যারা এঁকে দেয়, সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য দাঁত ঘর্ষনকারিনী এবং চোখের পাতা বা ভ্রুর চুল উৎপাটনকারিনী এবং এভাবে আল্লাহর সৃষ্টিতে পরিবর্তন আনায়ন কারিনীদের আল্লাহ্ অভিসম্পাত করেছেন। এক মহিলা হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসাউদ (রাঃ) কে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, যাকে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) অভিসম্পাত করেছেন আমি তাকে কেন অভিসম্পাত করব না, আর এটা পবিত্র কুরআনেও আছে। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, রাসূল তোমাদেরকে যা কিছু করতে বলেন, তা তোমরা গ্রহন কর, আর যা বস্তু হতে বিরত থাকতে বলেন তা হতে বিরত থাক” (সূরা হাশর, বুখারী, মুসলিম)
কিন্তু অধিকাংশ মেয়ে আজ এইসব ছাড়া ভাবতে পারে না। অথচ আমরা মুসলমান দাবীদার। জান্নাতের দাবীদার। যে নিজেকে অভিশপ্ত করল সে কি করে জান্নাতের আশা করল ? সে নিজেকে কি করে আল্লাহ হতে রহমতের আশা করল ?
আজ আমরা অনেকে নামাজ পড়ি, রোযা রাখি, রোযায় কয়েক খতম কোরআন শরীফ পড়ি, পর্দা করি। কিসের আশায়? যদি উপরোক্ত কারনে আমি যদি বরবাদ হয়ে যাই তবে কি মূল্য থাকবে এই ইবাদতের? আল্লাহ্ তায়ালা মাফ করনে ওয়ালা। তিনি চাইলে সবাইকে মাফ করে দিতেন পারেন। কিন্তু হাশরের ময়দানে প্রত্যেকটি জিনিসের হিসাব নেয়া হবে। সুক্ষ সুক্ষ হিসাব নেয়া হবে। তখন কে হবে আমার সুপারিশকারী? আর কিসের বিনিময়ে মুক্তি মিলবে? আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে সহীহ্ বুঝ দান করুক এবং বুঝ অনুযায়ী আমল করার তওফীক দান করুক। আমিন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন