বোরকা
বা নেকাব পরা মুসলমান নারীর অধিকার। ধর্মীয় দৃষ্টিতে এটি তাদের জন্য
অবশ্য-পালনীয়ও বটে। কিন্তু ফ্রান্সসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশে বোরকা পরার
বিরুদ্ধে আইন করা হয়েছে। আইন থাকলেও অন্য দেশগুলোতে এ আইনটি কার্যকর করা
বা এর জন্য ধর-পাকড় করার কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। ব্যতিক্রম ফ্রান্স।
সেখানে গত এপ্রিল মাসের ১১ তারিখ থেকে এ আইনটি জোরালোভাবে কার্যকর করা
হচ্ছে। ওই আইন অনুযায়ী বোরকা পরা কোনো মহিলা যদি তার মুখমন্ডল দেখাতে না
চান, তবে পুলিশ তাকে সর্বোচ্চ ১৫০ ইউরো বা ২১৬ ডলার জরিমানা করতে পারে।
ফ্রান্সের এ আইনটির আগ্রাসী আরেকটি রূপ হল, এতে ফরাসী বা বিদেশী যে কোনো বোরকা পরা মহিলাকে চ্যালেঞ্জ করা যাবে-যদি তিনি রাস্তা, পার্ক বা শপিংমলের মতো প্রকাশ্যস্থানে বোরকা পরে বের হন।
ফ্রান্সের এ আইনটির আগ্রাসী আরেকটি রূপ হল, এতে ফরাসী বা বিদেশী যে কোনো বোরকা পরা মহিলাকে চ্যালেঞ্জ করা যাবে-যদি তিনি রাস্তা, পার্ক বা শপিংমলের মতো প্রকাশ্যস্থানে বোরকা পরে বের হন।
তবে
এএফপি ও বিবিসির সূত্রে ১২ এপ্রিল ঢাকার পত্রিকাগুলোতে প্রকাশিত খবরে দেখা
গেছে, বোরকা বিরোধী আইন কার্যকর করার প্রথম দিনেই সচেতনভাবে মুসলিম নারীরা
এ আইনটি ভাঙতে শুরু করেছেন। ফ্রান্সের আভিগনন শহর থেকে প্যারিসগামী ট্রেনে
উঠার আগে সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসার জবাবে আইন ভেঙ্গে বোরকা পরা নারী কানিজা
দিদার (৩২) বলেন, ফরাসী এ আইন তার ইউরোপীয় অধিকার লঙ্ঘন করেছে। আইনভাঙ্গার
কারণে তাকে জরিমানার অর্থ গুণতে হয়েছে। তাকে নিয়ে ওই দিন ফরাসী
মিডিয়াতে যথেষ্ট হৈ চৈ হয়েছে। কিন্তু এতে তিনি মোটেও দমে যাননি। জরিমানা
দিয়ে হলেও এ উল্টো আইন ভেঙ্গে বোরকা পরে চলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
এদিকে বোরকা পরার ‘অপরাধে’
আইন অনুযায়ী মুসলিম নারীদের ওপর যে জরিমানা চাপানো হবে সে জরিমানার অর্থ
যোগান দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন এক ফরাসী মুসলিম ব্যবসায়ী। তিনি ফ্রান্সে
বোরকা পরা নারীদের সহযোগিতার জন্য তার ২০ লাখ ইউরো মূল্যের সম্পত্তি নিলামে
তোলার প্রস্ত্ততি নিয়েছেন। তিনি চান, বোরকা পরায় অভ্যস্ত ও আগ্রহী
মুসলিম নারী যেন আইনের কারণে বোরকা না খুলেন। আইন ভাঙ্গার কারণে জরিমানা যা
গুনতে হবে সেটা তিনি দেবেন। ধারণা করা হচ্ছে, তার মতো আরো বহু মুসলিম
ব্যবসায়ী ফরাসী মুসলিম নারীদের সাহায্যে দাঁড়িয়ে যাবেন।
বোরকা
বিরোধী এ আইনটির বিরুদ্ধে মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর প্রতিবাদ-বিক্ষোভের
পরিকল্পনার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। ইসলামী মানবাধিকার কমিশন বলেছে,
এ আইন জারি ও কার্যকর করার ফলে দেশটিতে রাষ্ট্রীয় মদদে ইসলাম-আতঙ্ক ও
মুসলিম বিরোধী বর্ণবাদের সূচনা হবে। কমিশনের সভাপতি বলেছেন, ২০০৪ সালে
ফ্রান্সের স্কুলগুলোতে উড়না বা স্কার্ফ নিষিদ্ধ হওয়ার পর থেকে দেশটিতে
অনেক মুসলিম মেয়ে পড়াশোনা ও চাকরি ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। দেশটিতে
মুসলমানদের ওপর হামলা বাড়তে থাকায় তাদের মধ্যে নিরাপত্তাহীতা বাড়ছে বলেও
তিনি উল্লেখ করেন।
ধারণা
করা হচ্ছে, প্রায় ৬০ লাখ মুসলমানের বসবাসক্ষেত্র ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট
নিকোলাস সারকোজি এ ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছেন স্থানীয় ভোটারদের মন জয় করতে।
এদিকে বোরকা বিরোধী আইনের এ দেশটি উপরে উপরে সভ্যতা ও মানবাধিকারের ডংকা
বাজালেও দেখা যাচ্ছে, দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে প্রকাশ্য নারী কেলেঙ্কারি ও
নারী নির্যাতনের নানা ঘটনায় তোলপাড় চলছে দুনিয়াজুড়ে। বর্তমান
প্রেসিডেন্ট সারকোজি তার স্ত্রীকে ডিভোর্স দিয়ে কয়েক বছর যাবত বিয়ে না
করেই ঘর-সংসার করছেন সাবেক এক মডেলের সঙ্গে। তাকে ফার্স্ট লেডির মর্যাদা
দিয়ে সঙ্গে নিয়ে দেশ-বিদেশে সফরও করছেন তিনি। অপর দিকে আগামী নির্বাচনে
তার সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী সদ্যবিদায়ী আইএমএফ প্রধান সম্প্রতি জোরপূর্বক
এক হোটেল-সেবিকার ওপর চড়াও হওয়ায় গ্রেফতার হয়ে আমেরিকায় বন্দি জীবন
যাপন করছেন। তার সামনে এখন দীর্ঘ কারাবাসের হাতছানি।
এখানে
দেখা যাচ্ছে, যে দেশটিতে আইন করে বোরকা নিষেধ করা হয়, বোরকা পরলে জরিমানা
দিতে হয়, সর্বোচ্চ স্তরে প্রকাশ্য লাম্পট্য আর ঘৃণ্য যৌন নির্যাতনের
কালোদাগ সে দেশের বৈশিষ্ট্য হয়ে গেছে। অপরদিকে আইন করে, জরিমানা ধার্য
করেও মুসলিম নারীদেরকে বোরকাবিহীন জীবনে বাধ্য করা সম্ভব হচ্ছে না। নিজেদের
শালীনতা ও ইসলামসম্মত পোশাকরীতি বজায় রাখতে তারা যে কোনো মূল্যেই
প্রস্ত্তত। এমনকি তাদের এই নৈতিক কাজে সহযোগিতার জন্য ক্ষতি স্বীকার করেও
আর্থিক যোগান দিতে আত্মমর্যাদাসম্পন্ন মুসলিম ভাইয়েরা পিছপা হচ্ছেন না।
আল্লাহর দ্বীনের প্রতি অবজ্ঞার ফল ও আল্লাহর দ্বীনের প্রতি ভালবাসার ধারা
যুগে যুগে এ রকমই হয়ে থাকে।
লেখাটি মাসিক আল কাউছার এর সৌজন্যে। লিখেছেন শরীফ মুহাম্মদ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন