বুধবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১১

এবার মসজিদ হিন্দুদের দিয়ে দেবার পায়তারা

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় রাসুল (সা.) হিন্দুদের পূজার জন্য মসজিদের অর্ধেক জায়গা ছেড়ে দিয়েছিলেন, বর্তমান সরকার সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছে মর্মে ধর্মপ্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যে ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা ও ইমামদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এই বক্তব্য নিয়ে তোপের মুখে পড়েন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি। গতকাল সকালে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মানবসম্পদ উন্নয়নে ধর্মীয় নেতাদের সম্পৃক্তকরণ শীর্ষক প্রকল্পের দুদিনব্যাপী বার্ষিক সভা ও কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এই ঘটনা ঘটে। এতে ফাউন্ডেশনের সব জেলা কর্মকর্তা, প্রতি জেলা থেকে ২ জন করে মোট ১২৮ জন ইমাম, হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের কর্মকর্তারা অংশ নেন। এদের মধ্যে ২০ জন নারী সদস্যও ছিলেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, গতকাল সকালে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ সংলগ্ন ইসলামিক ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. নুরুল আমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি শামীম মোহাম্মদ আফজাল উপস্থিত ছিলেন। উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ধর্মপ্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মো. শাহজাহান মিয়া হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ সব ধর্মের লোকদের সঙ্গে সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য দেশের ইমামদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, রাসুল (সা.) মসজিদের অর্ধেক হিন্দুদের পূজার জন্য ছেড়ে দিয়েছিলেন। ইমামদেরও সেই মানসিকতা নিয়ে সব ধর্মের লোকদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। বর্তমান সরকারও ইমলামিক ফাউন্ডেশনের (ইফা) মাধ্যমে সব ধর্মের লোকদের মধ্যে সেই ধরনের সম্প্রীতির সম্পর্ক গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, রাসুলের আদর্শ ছিল ধর্মনিরপেক্ষতা। বিদায় হজের ভাষণে তাই বলে গেছেন। তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ক্ষেত্রে ইমামদের সহযোগিতা কামনা করেন।
এদিকে ধর্মপ্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যে তাত্ক্ষণিকভাবে ইমাম ও ইফা কর্মকর্তাদের মধ্যে হৈ-চৈ এবং তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। কয়েকজন ইমাম এসময় লিখিত স্লিপ দিয়ে রাসুল (সা.) এর মসজিদ ভাগ করার বিষয়টি কোন কিতাবে আছে তার ব্যাখ্যা দাবি করেন। তবে ডিজি কোনো জবাব না দিয়ে চলে যান। দুপুরে অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে ধর্মপ্রতিমন্ত্রীর বিতর্কিত বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে ইমামরা অনুষ্ঠানের সভাপতি ও মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিবের কাছে ব্যাখ্যা চান। তিনি এসময় মসজিদ ভাগ করার বিষয়টি প্রতিমন্ত্রী ইফা ডিজি
র কাছ থেকে শুনেছেন বলে উপস্থিত ইমামদের জানান এবং এ বিষয়ে ইফা ডিজির কাছে জিজ্ঞাসা করার জন্য তাদেরকে পরামর্শ দেন। অপরদিকে বিকেলে অনুষ্ঠানের সমাপনী বক্তব্যে ইফা ডিজি শামীম মো. আফজাল একই ধরনের মন্তব্য করে বলেন, রাসুল (সা.) মসজিদের অর্ধেক ইহুদিদের জন্য ছেড়ে দিয়েছিলেন। আমরা সেই নবীর উম্মত। এ বক্তব্যে উপস্থিত ইমামরা আবারও বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তারা এর প্রতিবাদ জানালে ডিজি মঞ্চে এসে তাদের বক্তব্য উপস্থাপনের সুযোগ দেন। এসময় কুষ্টিয়া থেকে আগত এক ইমাম মুফতি রবিউল ইসলাম বলেন, হিন্দুদের জন্য দেয়ার তো প্রশ্নই আসে না, রাসুল (সা.) অন্য কাউকে মসজিদ ভাগ করে দিয়েছেন বলে আমরা কোনো কিতাবে পাইনি। তার এই বক্তব্যকে উপস্থিত ইমামরা সমর্থন করলে ইফা ডিজি প্রসঙ্গ পাল্টে বলেন, আমি জেরুজালেম গিয়েছিলাম। তখন ইহুদিরা আমাকে নামাজের ব্যবস্থা করে দিয়েছিল।
এদিকে প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে বেশ কয়েকজন বেপর্দা মহিলাকে ইমামদের পাশাপাশি বসানোর কারণে চরম বিব্রত ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা। এছাড়া ইমামদের ডেকে এনে ধর্মপ্রতিমন্ত্রী ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজির মতো সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তির মুখে ইসলাম সম্পর্কে বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্যে উপস্থিত সবাই হতবাক হয়ে যান। চাঁদপুরের এক ইমাম নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও নারী-পুরুষের সমতার কথা বলে বায়তুল মোকাররম মসজিদে বেপর্দা নারীদের এনে ইমামদের সঙ্গে বসানো হয়েছে। এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। কিশোরগঞ্জের আরেক ইমাম বলেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমেই ইসলাম সম্পর্কে যেভাবে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে এটা খুবই আশঙ্কাজনক।
উল্লেখ্য,বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ইসলামিক ফাউন্ডেশনে ইমামদের সামনে ব্যালেনৃত্যের আয়োজন করা হয়েছিল। ইফা ডিজি সম্প্রতি
জিহাদ বিদায় করতে হবে বলেও বিতর্কিত বক্তব্য দিয়েছিলেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আরো দেখুন

Related Posts with Thumbnails