এবার বোরকার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে মিরপুর গার্লস আইডিয়াল ল্যাবরেটরি
ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ। ২৪ মার্চ থেকে ওই প্রতিষ্ঠানের স্কুল শাখার কোন
ছাত্রী বোরকা বা অ্যাপ্রোন পরে ভিতরে ঢুকতে পারবে না বলে লিখিত নোটিশ দেয়া
হয়েছে। বোরকা পরে ছাত্রীরা স্কুলে ঢোকার কারণে নানা সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার
প্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ মুশতারী
আহমেদ জানিয়েছেন। এদিকে মুসলিম নারীদের জন্য ফরজ বিধান পর্দার মাধ্যম
বোরকার বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ
জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট অভিভাবকরা।
অভিযোগ মতে, মিরপুর ১০ নম্বরে
অবস্থিত মিরপুর গার্লস আইডিয়াল ল্যাবরেটরি ইনস্টিটিউটে গত মঙ্গলবার একটি
নোটিশ দেয়া হয় যে, ২৪ মার্চ থেকে প্রতিষ্ঠানের স্কুল শাখার মেয়েরা বোরকা বা
অ্যাপ্রোন পরে স্কুলে আসতে পারবে না। এই নোটিশ দেখে তাৎক্ষণিকভাবে ছাত্রী ও
অভিভাবকদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। বর্তমান সরকার কর্তৃক বোরকা
বিরোধী আইন তৈরির পর থেকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বোরকা নিষিদ্ধের
চক্রান্তের ধারাবাহিকতায় এই নোটিশ দেয়া হয়েছে এবং এটা ধর্মের ওপর আঘাত বলে
সংশ্লিষ্টদের অভিমত। ফখরুল, শহীদ, আনোয়ার, সালমাসহ বেশ কয়েকজন অভিভাবক
ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা মুসলমান। আমাদের মেয়েরা বোরকা পরবে এটাই
স্বাভাবিক। এতে স্কুল কর্তৃপক্ষের সমস্যা কোথায়? বোরকার বিরুদ্ধে এই
সিদ্ধান্ত নিলে বিবাহিতা হিন্দু মেয়েদেরকে কি শাখা-সিঁদুর পরে আসতে নিষেধ
করা হবে? তারা বলেন, বোরকা পরে যদি কোন মেয়ে ক্লাস ফাঁকি বা অনৈতিক কাজে
জড়িত থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ক্লাসের হাজিরা খাতা দেখে বা চিহ্নিত করে
কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। এজন্য ধর্মীয় বিধান
মানার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করতে পারে না। অভিভাবকদের অভিযোগ এই স্কুলে
পড়া-লেখার মান কমে যাওয়া, অভিভাবকদের বসার জায়গা না থাকাসহ নানা অনিয়ম ও
সমস্যা রয়েছে। এনিয়ে অভিভাবকরা আন্দোলনও করেছে। কিন্তু সেসব সমস্যা
সমাধানের কোন খবর নেই।
এদিকে বোরকা বিরোধী নোটিশের ব্যাপারে বেশ
কয়েকজন অভিভাবক গতকাল সকালে স্কুল শাখার সহকারী প্রধান শিক্ষিকা রেহানা
খানমের সঙ্গে আলাপ করেন। এসময় তিনি বিষয়টি নিয়ে প্রিন্সিপালের সঙ্গে
আলোচনার আশ্বাস দেন। এই নোটিশ প্রত্যাহার করা না হলে অভিভাবকরা বিক্ষোভ
করবে বলেও হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছে।
এবিষয়ে প্রিন্সিপাল মুশতারী আহমেদ
গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, আমরা বোরকা নিষিদ্ধ করেছি বলে অনেকে ভুল
বোঝাচ্ছে। আসল ব্যাপার হলো- এখানে ছাত্রীরা ভ্যারাইটিজ কালারের
হিজাব/অ্যাপ্রন পরে আসে। এতে কে ছাত্রী আর কে অভিভাবক তা বোঝা যায় না।
অনেকে ইচ্ছামতো স্কুলে ঢুকে আবার বের হয়ে যায়। এতে আমাদের অনেক সমস্যার
সম্মুখীন হতে হয়। তাই নিয়ম করা হয়েছে যে, যারা হিজাব পরে তারা স্কুলের
পোশাকের রংয়ের সঙ্গে মিলিয়ে সাদা রংয়ের মাথার হিজাব বা স্কার্ফ পরতে পারবে।
আর অ্যাপ্রনটা খুলে স্কুলের ভিতরে প্রবেশ করবে। কারণ স্কুলের মেয়েদের
মাথায় হিজাব পরলে আর বোরকা পরা লাগে না। তিনি আরও বলেন, ড্রেসের ব্যাপারে
আগেই বলা হয়েছে। তাই যারা এই ড্রেস না পরতে চায় তারা অন্য যায়গায় চলে যাক।
বোরকার কারণে ছাত্রীদের চিহ্নিত করা সমস্যা হলে আইডি কার্ড দেখে এর সমাধান
করা যায় কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনেকে আইডি কার্ড না নিয়ে
স্কুলে আসে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের দেশে মেয়েদের বোরকা পরার ক্ষেত্রে এই
বাধা প্রদান কতটা যুক্তিসঙ্গত এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অভিভাবকদের
কিছু বলার থাকলে তারা বলুক আমরা শুনব।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন